মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২

The Black Cat (সেই কালো বিড়াল) - Edgar Allan Poe (এডগার অ্যালান পো)

ভূমিকা

এডগার অ্যালান পো লিখিত 'দি ব্ল্যাক ক্যাট' গল্পটির মূল বিষয়টি একটি কালো বেড়ালকে ঘিরে কথকের বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তা থেকে মাদকতার জন্য কথকের ক্রম-বর্তমান মানসিক ও দৈহিক অবনতি। গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৪৩-এর ১৯-শে আগস্ট 'দি স্যাটারদে ইভিনিং পোস্ট' ম্যাগাজিনে।

চরিত্র

  • গল্পের কথক
  • কথকের স্ত্রী
  • কালো বিড়াল

সারমর্ম

গল্পের কথক হলেন পো'য়ের গল্পের সেই চির পরিচিত একজন বেনামি অনির্ভরযোগ্য কথক, যিনি তার অতীতের পাপের কাহিনী আমাদের শোনাছেন যা তাকে আজও ভীত করে। কথক ছোটবেলা থেকেই পশুপাখি প্রেমী বলেই পরিচিত, তিনি হলেন সেই সমস্ত লোকদের মধ্যে পরেন যারা নম্রতা ও কোমলতার জন্য সমাজে উৎপীড়িত হন। তিনি ও তার স্ত্রী অনেক পালিত পশুপাখির মালিক, যার মধ্যে আমাদের গল্পের সেই কালো বিড়াল প্লুটোও পড়ে। বিড়াল ও তার মালিক মানে, এই গল্পের কথকের মধ্যে একটি স্বভাবত পারস্পরিক প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে কথেকের মাদ্যকতা তার মানসিক বিকার ঘটায় যার কারণে প্লুটোর পাশাপাশি তার বাকি পালিত জীবগুলো তাকে এড়িয়ে চলে। এই একমাত্র পরিবারের তার থেকে কিছুটা ভয় ও কিছুটা ঘৃণায় এড়িয়ে চলাটা, কথক ঠিক মেনে নিতে পারে না। তাই এক রাতে যখন মদ্যপ অবস্থায় কথক বাড়ি ফেরেন আর তার প্রিয় প্লুটো তাকে দেখে সেখান থেকে সরে পড়তে যায়, তখন তার এই বেড়ে ওটা কোপের শিকার হয় অবলা প্রাণীটা। কথক তার পেন-নাইফ দিয়ে প্রাণীটার একটা চোখ সারাজীবনের মত কানা করে দেয়, শুধু নিজেকে রক্ষা করবার জন্য তাকে কামড়ে ছিল বলে। কিন্তু তারপর যখন সকালে তার নেশার ঘোর কেটে যায়, তার নিজের উপর ঘৃণা ও ক্ষেদ হতে থাকে। আর এরপর থেকে বিড়ালটাও আরও ভয়ে ভয়ে দূরে থাকে। বিড়ালটার ক্ষিপ্র ভাবে খোবলানো চোখটা যেন কথকে তার পাপের কথা বার বার মনে করায়, কথকের এই ঘটনা মনে পড়লে কষ্ট হত কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার বিরক্তির কারণ হয়ে উঠল। তাই আরেকটি রাত্রে মদ্যপ অবস্থায় বিকৃতমানসিকতার(perverseness) পরিচয় দিয়ে বিড়ালটার প্রাণ দণ্ডের জন্য, সেটাকে গলায় দড়ি দিয়ে বাগানের গাছে লটকে দেয়, যেখানে সেটা মারা যায়। সেই রাত্রেই অদ্ভুত ভাবে তার বাড়িতে আগুণ ধরে যায়, যেখানে তিনি, তার স্ত্রী ও তার একমাত্র পরিচারক সেখান থেকে পালিয়ে যান। কেমন যেন ঈশ্বরের ন্যায় একটু তাড়াতাড়ি বিচার দিল!

পরের দিন আগুনে দগ্ধ বাড়িতে ফিরে, কথক দেখেন আগুণ থেকে বেঁচে যাওয়া একটা দেওয়ালে একটি বিশাল বেড়ালের গলায় দড়ি লাগানো প্রতিচ্ছবি। যদিও প্রথমটা কথক ইতস্ত বোধ করছিলেন, পরে ভেবে দেখেন হয়তো মড়া বিড়ালটাকে কেউ জানলা দিয়ে বাগান থেকে ছুঁড়ে ফেলে, আর হয়তো বিড়াল আগুণের তাপে বেঁচে উঠে। এই পুরো ঘটনাটা তাকে আরও আর্থিক ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে দেয় কারণ বেড়ালটির সাথে সাথে তার বিশাল বাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্ত। বিড়ালটাকে যখনি মনে পরে তখন তার কৃতকর্ম তাকে অনুতপ্ত করে। আবার একদিন মদের ঠেকে প্লুটোর মত দেখতে একটা বিড়ালকে দেখতে পান কথক, বিড়ালটা প্রথম দেখা থেকে তার খুব নেউটা হয়ে যায়। রঙ, আকৃতি সবই একইরকম হলেও এই বিড়ালটার বুকের কাছে একটা সাদা ছোপ ছিল। বিড়ালটাকে বাড়িতে নিয়ে গেলেন কথক। প্রথম কদিন তার প্লুটোর হারাবার কষ্ট কমালেও, কিছুদিন পর থেকে এই বিড়ালটাকে ভয় ও ঘৃণা করতে শুরু করল কারণ তার পাপের কথা মনে করিয়ে দেয় সে। আবার এই বিড়ালটারও একটা চোখ কানা আর তার বুকের কাছে সাদা ছোপটা ফাঁসির কড়িকাঠের চেহারা নিতে লাগল। এইসব বিষয় তাকে আরও ক্রুধ ও ভীত করতে থাকে। একদিন তাই নতুন বাড়িতে সেলারে সে ও তার স্ত্রী কিছু একটা দেখতে গেলে, বিড়ালটাও তাদের পিছু নেয়। সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় বিড়াল এমনভাবে পায়ের নীচ দিয়ে বেরিয়ে যায় যে আর একটু হলে কথক পড়ে যেতেন, এই ঘটনায় রেগে গিয়ে কথক একটা কুঠার নিয়ে তেড়ে যায় বিড়ালটাকে মারবার জন্য। তার স্ত্রী বাঁধা দিয়ে পথের সামনে দাঁড়ালে, কথক সেই কুঠার তার স্ত্রীর মাথায় বসিয়ে দিয়ে মেরে ফেলেন। মৃতদেহটা সেই সেলারের কাঁচা দেওয়াল ভেঙ্গে তার ভিতরে ঢুকিয়ে বালি সিমেন্ট দিয়ে সেঁটে দেন ঠিক আগের মত। তার স্ত্রীকে দেওয়াল বন্দি করবার পর সেই বিড়ালের কোন দেখা না পেয়ে কথক নিশ্চিন্ত হল। এবার তার শান্তির মাঝখানে কেউ আস্তে পারবে না। এই মারাত্মক পাপের জন্য দুঃখ বোধ হয়েছিল কিন্তু যখন সবাই তার স্ত্রীকে খুঁজেও না পেয়ে হাল ছেড়ে দিল, তখন কথকের কেমন যেন একটা স্বস্তির মুক্তির ঘুম হল। কিছুদিন পর পুলিস সন্ধানে এলে বাড়ি তন্য তন্য করে খুঁজেও যত কিছু পায়না ততই কথক কেমন উন্মত্ত প্রফুল্লতায় ভরে উঠেন। সব শেষে যখন সেলারে খুঁজেও কিছু পেল না পুলিস, তখন সেই উন্মত্ত প্রফুল্লতায় দেওয়াল ঠুকে ঠুকে বাড়ির দেওয়ালের প্রশংসা শুরু করেন তিনি। নিজের পাপ সফল ভাবে লুকাতে পারবার নিশ্চিন্তের আনন্দে যেই সেই দেওয়ালে ঠোকা মারে যেখানে তার স্ত্রীর দেহটা লুকানো ছিল, তখনি একটা তীব্র অমানবিক চিৎকার শোনা যায় দেওয়ালের ওপার থেকে। পুলিস কর্মীরা দেওয়াল ভেঙ্গে আবিষ্কার করে একটা পচনপ্রাপ্ত নারীর মৃতদেহ ও তার মাথার উপর বসে থাকা সেই কালো বেড়ালটা যেটা এখনও চেঁচিয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কিত কথক তার অপরাধের আবিষ্কার হতে দেখে ও কালো বিড়ালটির অলৌকিক প্রত্যাবর্তন হতে দেখে, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলেন যে, "আমি এই শয়তানকে সমাধিতে দেওয়ালে বন্দি করেছিলাম!"

থিম এবং বিশ্লেষণ

এই গল্পটার কথকের মানসিক সাম্যবস্থার উপরে আমাদের শুরু থেকেই সন্দেহ হয়। একদিকে নিজেকে কথক চরম পশুপাখি প্রেমী বলছেন, অন্যদিকে তার বিড়ালের উপর চরম আঘাত হানছেন। তার স্ত্রী তার পশুপাখি প্রেমে অংশ নেয়, তাই হয়তো তার স্ত্রীকে তার পালিতা বলেই মনে করেতেন। তার অত্যাধিক পশুপ্রেম এই মানসিক বিকারের কারণ। এই গল্পে পো 'মাদকতা'-কে একটি অসুখ বা দানব বলে আখ্যান দেন এবং এই গল্পে তার তীব্র বর্জনের বার্তাও দেন। গল্পে 'কালো বেড়াল'-এর ব্যবহার কুসংস্কারের জন্য করা হয়েছে, এবং এক জায়গা এটাও বলা হয় ডাইনিরা নাকি কালো বেড়ালের রূপে ঘুরে বেড়ায়। আবার বেড়ালটির নামও রোমান পুরাণের পাতালের দেবতা প্লুটোর নামে। স্কটিশ ও আইরিশ পুরাণ মতে ক্যাঁত-সিথের ও বুকে সাদা ছোপ ছিল। এদিকে পোয়েরও একটি কালো বেড়াল ছিল। কালো বেড়ালটি পুরো গল্পে একটি নিরপেক্ষ চরিত্রে অংশ গ্রহণ করেছে। কথক তার মাদকতার কারণে চরম শাস্তির শিকার হয়েছে বিড়ালটি যদি তার নামে ও রঙে একটি অশুভ ভাব আছে, কিন্তু বিড়ালটিই ছিল কথেকের চরম অবনতির সাক্ষী, ঠিক ডাইনিদের মত। প্লুটোর একটি চোখের অন্ধ হওয়া কথেকের আপেক্ষিক নৈতিক অন্ধ হওয়াকে বোঝায়। কথকের বাড়ির পুরে ছাই হয়ে যাওয়া তার সম্পূর্ণ নৈতিক অবনতির চিহ্ন, আর সেই প্লুটোর দেওয়ালে ছাপটি ছিল অমার্জনীয় ও গর্হিত অপরাধের চিহ্ন। পো এখানে diazeugma এর ব্যবহার করেছেন, গল্পের বিবরণ সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত রাখবার জন্য।

বাহ্যিক লিঙ্কগুলি